রক্তের গ্রুপ স্বামী স্ত্রীর অনাগত সন্তানের জীবন ঝুঁকির কারণ হতে পারে, এটা বর্তমান যুগে আমরা সবাই মোটামোটি জানিই, তবে কতটুকু সঠিক জানি এ নিয়ে আমার মনে যথেষ্ট সংশয় আছে । চলুন, বিস্তারিত জানা যাক।
রক্তকে প্রধানত ২ গ্রুপে বিভক্ত করা হয়।
এ বি ও সিস্টেম (ABO system) : এরা রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করে। যেমনঃ ‘এ’(A), ‘বি’(B), ‘এবি’(AB) এবং ‘ও’(O)।
আর এইচ ফ্যাক্টর (Rh factor) : এরা নির্ধারণ করে রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হবে না নেগেটিভ। যেমনঃ A+, A-, B+, B-, AB+, AB-, O+ এবং O- ।
Rh ফ্যাক্টর কেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় : Rh নেগেটিভ গ্রুপের ব্যক্তির শরীরে যদি Rh পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয় তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় কিছু হবে না। এই পজিটিভ রক্তের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। ফলে ২য় বার যদি আবার পজিটিভ রক্ত দেয়া হয় তাহলে রক্তের কোষগুলো ভেঙ্গে যাবে যার ফলে ব্যক্তি জ্বর, কিডনি ফেইল বা হঠাৎ মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
স্বামী স্ত্রীর রক্ত কেমন হওয়া উচিত : স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের Rh এক রকম থাকতে হবে। স্বামীর Rh পজিটিভ হলে স্ত্রীরও Rh পজিটিভ হতে হবে। নেগেটিভ হলে নেগেটিভ। স্বামীর Rh পজিটিভ হলে স্ত্রীর Rh নেগেটিভ হওয়া যাবেনা। তবে স্ত্রীর Rh পজিটিভ হলে আর স্বামীর Rh নেগেটিভ হলেও কোন সমস্যা নেই। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সমস্যা হয় না।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সন্তানের অবস্থা
পজিটিভ (+) পজিটিভ (+) সুস্থ সন্তান
নেগেটিভ (-) নেগেটিভ (-) সুস্থ সন্তান
নেগেটিভ (-) পজিটিভ (+) সুস্থ সন্তান
পজিটিভ (+) নেগেটিভ (-) প্রথম সন্তান সুস্থ, বাকীরা মৃত
স্ত্রীর Rh নেগেটিভ আর স্বামীর Rh পজিটিভ হলে কি সমস্যা হতে পারে :
পজিটিভ (+) পজিটিভ (+) সুস্থ সন্তান
নেগেটিভ (-) নেগেটিভ (-) সুস্থ সন্তান
নেগেটিভ (-) পজিটিভ (+) সুস্থ সন্তান
পজিটিভ (+) নেগেটিভ (-) প্রথম সন্তান সুস্থ, বাকীরা মৃত
স্ত্রীর Rh নেগেটিভ আর স্বামীর Rh পজিটিভ হলে কি সমস্যা হতে পারে :
স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ আর স্ত্রীর নেগেটিভ হলে স্ত্রীর শরীরে “লিথাল জিন (Lethal Gene)” বা “মারন জিন” নামক একটি জিন তৈরি হয় যা জাইগোট সৃষ্টিতে বাধা দেয় অথবা মেরে ফেলে। ফলে মৃত বাচ্চার জন্ম হয়।যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয় তাহলে সাধারনত বাচ্চার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ হবে। যখন কোনো নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের মা পজিটিভ ভ্রুন(Fetus) ধারন করে তখন সাধারনত প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু প্রসবের সময় পজিটিভ ভ্রুন রক্তের প্লাসেন্টাল ব্যারিয়ার(placental barrier) ভেদ করে এবং প্লাসেন্টাল ডিসপ্লেসমেন্ট(placental displacement) এর সময় মায়ের শরীরে প্রবেশ করে। প্রসবের সময় মায়ের শরীরে যে রক্ত প্রবেশ করে, তা প্রসব হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে Rh এন্টিবডি তৈরী করবে। যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করে, তখন যদি তার ভ্রুনের রক্তের গ্রুপ পুনরায় পজিটিভ হয় তাহলে মায়ের শরীরে আগে যে Rh এন্টিবডি তৈরী হয়েছিলো সেটা প্লাসেন্টাল ব্যারিয়ার ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করে। যখন ভ্রুনের শরীরে Rh অ্যান্টিবডি ঢুকবে তখন লোহিত রক্ত কনিকা(RBC) জমাট বেধে ভেঙ্গে যাবে। একে মেডিকেলের ভাষায় আর এইচ এর অসামঞ্জস্য(Rh incompatibility) বলে।
স্বামীর ব্লাডগ্রুপ পজিটিভ হলে, বাচ্চার জন্মের পরপরই বাচ্চার ব্লাডগ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। যদি নেগেটিভ হয় মায়ের মত, তবে কিছু করার দরকার নায়। আর পজিটিভ হলে এন্টি ডি ইনজেকশন নিতে হবে ডেলিভারির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। তাই বিয়ের আগে হবু বর কণের রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া উচিত এবং উভয়েরই একই আরএইচ ফ্যাক্টরভুক্ত অর্থাৎ হয় উভয়ই আরএইচ পজেটিভ নয়তো উভয়েরই আরএইচ নেগেটিভ দম্পতি হওয়া উচিত ।
পরিশেষে বলা যায় রক্ত দান বা গ্রহণ করার সময় বা বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার সময় শুধু রক্তের গ্রুপই নয় রক্তের আরএইচ ফ্যাক্টর নির্ণয় এবং রক্তে জীবাণুর উপস্থিতি সম্বন্ধেও পরীক্ষা করা উচিত । জরুরী রক্ত গ্রহণ বা দানের দরকার হলে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ জানা না থাকলে ও এবং আরএইচ নেগেটিভ রক্ত গ্রহণ বা দান করাই উত্তম।
অনুপ্রেরণা : গবেষণা ও ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment